মৌলভীবাজার জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের অন্তর্গত ঐতিহ্য মন্ডিত জেলা। পর্যটন শিল্পের জন্যে গুরুত্বপূর্ন এই জেলা বাংলাদেশের সভ্যতা, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতে অবদান অনেক। বৈচিত্রময় চারপাশে, দৃষ্টি নন্দন চা বাগান, আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আপন মহিমায় এই জেলা অন্যে জায়গা থেকে ভিন্ন।
মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে অনেক পর্যটক আকর্ষণীয় ভ্রমণ স্থান ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পন্ন জাগায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে রয়েছে, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হযরত শাহ মোস্তফা (র:) এর মাজার শরীফ, ৯২ টি চা বাগান, চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট, পৃথিমপাশা নবাববাড়ী, মনু ব্যারেজ, মাধবপুর চা-বাগান লেক, মনিপুরী পল্লী, কমলা/লেবু/আনারস বাগান, পাহাড়, টিলা, হাওড় ও বিলের সমাহার।
মাধবপুর লেক :
মাধবপুর লেক (Madhabpur Lake) বা হ্রদটি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। কমলগঞ্জ উপজেলা সদরে থেকে মাধবপুর লেকের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। ১৯৬৫ সালে চা বাগানের টিলায় বাঁধ দিয়ে পানি জমিয়ে এই লেক তৈরী করা হয়। প্রায় ৫০ একর আয়তনের মাধবপুর হ্রদের দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটার এবং স্থান বিশেষে প্রস্থ ৫০ থেকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত।
মাধবপুর লেককে ঘিরে রয়েছে ছোট বড় পাহাড় ও টিলা। আর টিলায় রয়েছে সুদৃশ্য চা বাগান। ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন মাধবপুর চা বাগানের ১১ নম্বর সেকশনে অবস্থিত মাধবপুর লেকের শোভা বাড়ায় সাদা ও নীল পদ্ম ফুল। শীতকালে এই লেকে অনেক অতিথি পাখিরও আগমন ঘটে। পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং চা বাগানের ব্যবস্থাপনার কথা বিবেচনা করে মাধবপুর লেকে সকাল ৮টা হতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভ্রমণকারীদের অবস্থান করতে দেয়া হয়। মাধবপুর লেক ঘুরে হাতে সময় থাকলে চলে যেতে পারেন ৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ দেখতে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান :
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল (আংশিক) উপজেলায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান অবস্থিত। বাংলাদেশের যে ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যান আছে তার মধ্যে লাউয়াছড়া অন্যতম। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। ১২৫০ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট এ উদ্যানটিকে প্রাকৃতিক জাদুঘর বললেও কম হবে। বিভিন্ন প্রকার গাছগাছালি ও পশুপাখি এ বনের শোভা আরো বৃদ্ধি করেছে। জীব বৈচিত্রে ভরপুর নান্দনিক সৌন্দর্যের অন্যতম স্থান এই জাতীয় উদ্যানটি দেশে ট্রপিক্যাল রেইন ফরেস্ট হিসেবে খ্যাত। লাউয়াছড়া উদ্যান মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
মাধবকুন্ড জলপ্রপাত (Madhabkunda Waterfall) মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত। কিছু বছর আগেও মাধবকুন্ড ছিল বাংলাদেশের জলপ্রপাত প্রেমী পর্যটকদের কাছে একমাত্র আকর্ষন। বর্তমানে বাংলাদেশে আরো বেশ কিছু ঝর্ণা আবিষ্কৃত হয়েছে। তবু পর্যটকদের কাছে মাধবকুন্ড ঝর্ণার আবেদন একটুও কমেনি। সরকারী উদ্যোগে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের রেস্টহাউজ ও রেস্টুরেন্ট এবং ২৬৭ একর এলাকাকে নিয়ে ২০০১ সালে মাধবকুন্ড ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মাধবকুন্ড ইকোপার্কের মেইন গেইট থেকে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার পথ হেটে গেলে মাধবকুন্ড ঝর্ণার দেখা মিলবে। অনিন্দ্য সুন্দর এই জলপ্রপাত প্রায় ১৬২ ফুট উঁচু।
মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের কাছে পরিকুন্ড নামে আরো একটি ঝর্ণা আছে। ঝিরি ধরে ১০-১৫ মিনিট হেঁটে গেলেই সেই ঝর্ণার কাছে যাওয়া যায়। মাধবকুন্ড ইকোপার্ক ঘুরে দেখতে বেশ উপভোগ্য। দিনের পুরোটা সময় ব্যয় করার সুযোগ রয়েছে এখানে। ইকোপার্কে আরো আছে শ্রী শ্রী মাধবেশ্বরের তীর্থস্থান, চা বাগান, খাসিয়া পল্লী, কমলা, লেবু, সুপারী ও পানের বাগান। আবার কোথাও কোথাও জুম চাষেরও দেখা মিলবে। চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত সংলগ্ন কুন্ডে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বারুনী স্নান অনুষ্ঠিত হয় এবং পাশাপাশি এখানে মেলার আয়োজন করা হয়।
চা-বাগানের জন্য বিখ্যাত মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলকে বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী বলা যেতে পারে। মৌলভীবাজার জেলায় ৯২ টির মত চা বাগান রয়েছে। ৪৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের নজরকাড়া সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন অনেক পর্যটক আসেন। মাইলের পর মাইল পর্যন্ত চা বাগান দেখে পাহাড়ের ঢালে সবুজ গালিচা বলে মনে হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নত মানের চা শ্রীমঙ্গলেই উৎপন্ন হয়ে।
শ্রীমঙ্গলের প্রবেশ পথে ‘চা-কন্যা’ ভাস্কর্য দৃষ্টি কেড়ে নেবে। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসণের তৈরি এ ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে সাতগাঁও চা-বাগানের সহায়তায়। ‘চা-কন্যা’ ভাস্কর্যের সামনে থেকেই বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে সাতগাঁও চা-বাগান। ইংরেজদের শাসনকালের স্মৃতি বহনকারী সিলেটের চা বাগানগুলোতে সেই সময়ের মতো কাঠের তৈরি সাদা রঙের ভবনে ম্যানেজারেরা বাস করেন। আর তাই চা বাগানের জীবন যাত্রাতেও ইংরেজ আমলের অনেক ছাপ লক্ষ করা যায়।
সিলেট বিভাগের মৌলভিবাজার জেলা সদর, শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত একটি বৃহদাকার জলাভূমির নাম হাইল হাওর (Hail Haor)। ১৪ টি বিল ঘেরা হাইল হাওরের সর্বমোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার হেক্টর। প্রচুর লতা ও গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ থাকার কারণে স্থানীয়দের কাছে এটি লতাপাতার হাওর নামেও পরিচিত।
হাওরের চিরায়ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নীল আকাশ ও পানির মিতালী যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির বাস্তব রূপ। সেকারণে হাওড়ের বুকে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে সারাদেশের ভ্রমণকারীরা এই ভূস্বর্গে ছুটে আসেন। হাইল হাওরের অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি জীববৈচিত্রেরও কোন ঘাটতি নেই। এই হাওরে প্রায় ৯৮ প্রজাতির মাছ ও প্রায় ১৬০ প্রজাতির পাখির বিচরণ লক্ষ করা যায়।
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ (Bir Shrestho Hamidur Rahman Monument) অবস্থিত। ঝিনাইদহে জন্ম নেয়া বীর সন্তান হামিদুর রহমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সাহসী সিপাহী ছিলেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে হামিদুর রহমান সিলেটের শ্রীমঙ্গল এলাকায় যুদ্ধ করছিলেন। ২৮ অক্টোবর সকালে দলের অধিনায়কের নির্দেশে হামিদুর রহমান ধলই বিওপি-তে পাকিস্থানীদের ঘাটি দখলের জন্য অগ্রসর হন। হালকা একটি মেশিনগান নিয়ে জীবন বাজি রেখে হামিদুর রহমান একাই দুইটি পাকিস্থানি যুদ্ধ ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেন। এতে শত্রুঘাটির অধিনায়ক এবং বেশ কয়েকজন সৈন্য নিহত হয়। একসময় যুদ্ধরত অবস্থায় এই বীর সন্তান শত্রুদের পাল্টা আক্রমনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁর আত্নত্যাগের কয়েকদিনের মধ্যেই ধলই সীমান্ত ফাঁড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সহযোদ্ধারা হামিদুর রহমানের মৃতদেহ সীমান্তের ওপারে নিয়ে ভারতের আমবাসা গ্রামের একটি মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করেন।
দীর্ঘ ৩৬ বছর পর ২০০৫ সালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আমবাসা গ্রাম থেকে তাঁর দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ২০০৭ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকার মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর দেহাবশেষ সমাহিত করা হয়। অসীম সাহসিকতার জন্য সিপাহী হামিদুর রহমানকে মরণোত্তর বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়। এই মহান বীরের প্রতি সম্মান জানিয়ে শ্রীমঙ্গলের থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে ধলই চা বাগানের একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। আর ঝিনাইদহে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের গ্রামে কলেজ মাঠে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ হামিদুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতি বছর ২৮ অক্টোবর হামিদুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে মৌলভীবাজারের স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে অসংখ্য পর্যটক ও দর্শনার্থী এই বীরশ্রেষ্ঠের স্মৃতিসৌধতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন।
চায়ের শহর হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের পূর্ব পাশে অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল (Baikka Beel) অবস্থিত। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে বাইক্কা বিলের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। ২০০৩ সালের ১ জুলাই বাইক্কা বিলকে মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্তের পর বাইক্কা বিলকে ঘিরে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট গড়ে উঠেছে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর হাজার হাজার পাখির কলতানে মুখরিত থাকা বাইক্কা বিলে রয়েছে বালি, বুনো হাঁসের বসতি ও গরু মহিষের বিশাল চরন ভূমি। প্রতি শীতে বিলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে দূর দূরান্ত থেকে দেশি-বিদেশী পর্যটকরা এখানে ভিড় জমায়। বর্তমানে হাওরটি ৮০ প্রজাতির মাছ, ১৮ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ এবং প্রায় ১৬০ প্রজাতির পাখির নিরাপদ আবাসস্থল। বিপুল পরিমাণ পাখির আগমণের কারণে প্রতি বছর এই বাইক্কা বিলে পাখিশুমারি অনুষ্ঠিত হয় এবং এই তথ্য আন্তর্জাতিক ভাবে সংরক্ষণ করা হয়।
১০০ হেক্টর জলাভূমি জুড়ে বিস্তৃত জলজ ও উভচর প্রাণীর আবাসস্থল বাইক্কা বিলের উল্লেখযোগ্য পাখির মধ্যে আছে পানকৌড়ি, কানিবক, ডাহুক, জল মোরগ, ধলাবক, ধূপনি বক, রাঙ্গা বক, মাছ রাঙ্গা, গোবক, শঙ্খচিল ইত্যাদি। মৌসুম ভেদে নবরূপে সেজে উঠা বাইক্কা বিলের বিশাল জলরাশি ভরে উঠে হিজল, কলমি, নয়নকারা, পানা, শাপলা, নীল পদ্ম, সিংড়া ও মাখনার মতো নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদ ও জীব বৈচিত্রে। দর্শনার্থীদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার সুবিধার্থে বিলের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে একটি দ্বিতল অবজারভেশন টাওয়ার। ওয়াচ টাওয়ার থেকে ঘন সবুজ বন ও পুরো বিলের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য উপজাতীয় নৃ-গোষ্ঠী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তেমনি মৌলভীবাজার শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গলের কমলগঞ্জ উপজেলায় আদমপুর ইউনিয়নে মনিপুরী সম্প্রদায়ের কাপড়ের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে মণিপুরী পল্লী (Monipuri Village)। স্থানীয় মনিপুরীরা এখানে নিজেরা কাপড়ের বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে। দেশ বিদেশে মণিপুরী পণ্য সমূহের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এছাড়া নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কারণেও মনিপুরীদের সুখ্যাতি ছড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপী।
পর্যটকদের কাছে শ্রীমঙ্গলের পাহাড়, চা বাগান এবং অরণ্য ভূমির নয়নাভিরাম দৃশ্যের পাশাপাশি মণিপুরীদের জীবন ব্যবস্থা ও সংস্কৃতি বেশ উপভোগ্য। বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী নাচ, প্রতি বছর বাংলা অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত রাস মেলা উল্লেখযোগ্য। রাস মেলায় মনিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক খামি, হাতে বোনা শাল, চাঁদর, শাড়ী, সেলোয়ার-কামিজ, ব্যাগ, ফতুয়া, পাঞ্জাবির মতো বিভিন্ন জিনিস কেনা যায়। যদিও সারাবছর শ্রীমঙ্গলের স্থানীয় দোকান থেকেও এসব মণিপুরী পণ্য কিনতে পারবেন কিন্তু মণিপুরী পল্লী কিংবা রাস মেলা থেকে কেনাকাটার মজাই অন্যরকম। এছাড়া মণিপুরী সংস্কৃতি আরো ভালোভাবে জানার জন্য মাধবপুরে মনিপুরী পল্লীর সাথেই আছে মণিপুরী সাংস্কৃতিক একাডেমী।
চা বাগানের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে টি বোর্ডের উদ্যোগে ২০০৯ সালে চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চা রিসোর্ট ও জাদুঘর (Sreemongol Tea Resort And Museum) প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশের চা শিল্পের প্রায় দেড়শ বছরের প্রাচীন ইতিহাস এবং চা চাষ সম্পর্কিত সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চা গবেষণা কেন্দ্রের কাছে চারটি কক্ষে ৪৪ টির অধিক সংগ্রহ ও স্মারকের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে এই চা জাদুঘরকে। চা জাদুঘরের পাশে মনোমুগ্ধকর টি রিসোর্টের অবস্থান। মূলত পুরানো একটি বৃটিশ বাংলোকে আধুনিক রিসোর্টের রূপ দেয়া হয়েছে।
চোখ জুড়ানো সবুজ চা বাগানে ঘেরা এই জাদুঘরে ব্রিটিশ শাসনামলে চা বাগানে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ব্রিটিশ বাংলোয় ব্যবহৃত শতাধিক আসবাপত্র, চা প্রসেসিং যন্ত্রপাতি, চা বাগানের ম্যানেজার ও চা শ্রমিকদের ব্যবহৃত জিনিস, প্রাচীন রৌপ্য ও তাম্য মুদ্রাসহ বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন স্থান পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের স্মৃতি বিজড়িত একটি কক্ষ এই চা জাদুঘরের বিশেষ আকর্ষণ। ১৯৫৭-৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু পাকিস্থান চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে শ্রীমঙ্গলের নন্দবাড়ি চা বাগান পরিদর্শনে আসেন। তাঁর ব্যবহৃত চেয়ার ও টেবিল এই জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এছাড়া রয়েছে সাদা পাঞ্জাবি পাজামা পরিহিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের একটি বিশেষ প্রতিকৃতি, যা দেখে মুগ্ধতা ছুঁয়ে যায়।
World Luxury Hotel Awards প্রাপ্ত দুসাই রিসোর্ট এন্ড স্পা (DuSai Resort & Spa) এর অবস্থান মৌলভীবাজার জেলার গিয়াসনগরে। সুদৃশ্য লেক এবং পাহাড়ের ওপর সবুজ বনানী পরিবেষ্টিত এই রিসোর্টটি অবকাশ যাপনের জন্য একটি আদর্শ স্থান হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।
হাকালুকি হাওর (Hakaluki Haor) সিলেট ও মৌলভীবাজারের ৫টি উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ মিঠা পানির জলাভূমি। হাকালুকি হাওর প্রায় ২৩৮ টি বিল ও ১০ টি নদীর সমন্বয়ে গঠিত এবং বর্ষাকালে এই হাওরের আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর। মাছের জন্য প্রসিদ্ধ হাকালুকি হাওরে শীতকালে অতিথি পাখিদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে। এছাড়াও এখানে প্রায় ১০০ প্রজাতির স্থানীয় পাখি দেখা মিলে। হাওরের বিস্তির্ন ভূমি, বিল নির্ভর মানুষের জীবনযাত্রা এবং অথিতি পাখির আহ্বানে ভ্রমনপিয়াসীরা হাকালুকি হাওরে ছুটে আসে।
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গভীরে ২০১০ সালের শেষের দিকে পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মাকে সাথে নিয় একদল পর্যটক হাম হামের এই অনিন্দ্য জলপ্রপাতটি আবিষ্কার করেন। স্থানীয়দের কাছে এই ঝর্ণা চিতা ঝর্ণা হিসাবে পরিচিত, তাদের মতে এই জঙ্গলে আগে চিতা পাওয়া যেত। প্রায় ১৪০ফিট উঁচু এই ঝর্ণার বুনো সৌন্দর্য দেখার জন্যে অনেক কষ্ট স্বীকার করে সমগ্র বাংলাদেশ থেকে মানুষ ছুটে আসে। শীতকালে তুলনামূলক পানি অনেক কম থাকে তাই বর্ষা কাল হাম হামের বুনো সৌন্দর্য্য দেখার উপযুক্ত সময়।
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ একটি পাঁচ তারকা মানের রিসোর্ট। সিলেট বিভাগের প্রথম পাঁচ তারকা মানের বিলাসবহুল এই রিসোর্টে বিনোদনের জন্য আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে। ২০১৩ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে প্রথম বছরেই ওয়ার্ল্ড লাক্সারি হোটেল এওয়ার্ড ২০১৪ অর্জন করে নেয় গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ। গ্রান্ড সুলতান রিসোর্ট মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত। সবুজ প্রকৃতি ও চা বাগানে ঘেরা শ্রীমঙ্গলের প্রায় ১৩.২ একর জায়গার ওপর এই রিসোর্টটি গড়ে তোলা হয়েছে। আট ধরণের বিভিন্ন মানের সুবিধাসহ এখানে সর্বমোট ১৩৫ টি কক্ষ রয়েছে। পরিবারের সবাই কিংবা প্রিয় সঙ্গীকে নিয়ে আপনার ছুটির দিনের সময়টুকু প্রকৃতির কাছে থেকে আনন্দে কাটাতে চাইলে চলে যেতে পারেন গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্টে।
রাঙাউটি রিসোর্ট :
শহরের বদ্ধ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে খোলা প্রাণে নিশ্বাস নিতে আমাদের মন হাঁপিয়ে উঠে। কিছুদিন প্রাকৃতিক পরিবেশে আনন্দময় অবকাশ যাপন এই যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ নিমিষেই উড়িয়ে দেয়। তাই নিরিবিলি ছুটি কাটানোর জন্য রিসোর্টের জুড়ি নেই। আর তা যদি হয় চায়ের দেশ মৌলভীবাজারের প্রকৃতিঘেরা অনিন্দ্য সুন্দর কোনো রিসোর্ট, তবে তো কথাই নেই। মৌলভীবাজার জেলা হচ্ছে প্রকৃতির অসীম সৌন্দর্যের আঁধার। পাহাড়, নদী, অরণ্য, হাওর আর সবুজ চা বাগানঘেরা এই জেলার সৌন্দর্যের সাথে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এই রাঙাউটি রিসোর্ট। কৃত্রিম এবং প্রকৃতির মেল বন্ধনে গড়া অপরূপা রাঙাউটি রিসোর্টে পরিবার-পরিজন নিয়ে আপনি কাটাতে পারবেন দারুণ এক অবকাশ। মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত মনু ব্যারেজের পাশে রাঙাউটি রিসোর্টের অবস্থান। ৪৫ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই রাঙাউটি রিসোর্ট যাত্রা শুরু করে ২০০৯ সালে। এই রিসোর্টটির অনন্য স্থাপত্যশৈলী দারুণ মনোমুগ্ধকর।